এখনই ন্যাটো জোটের সদস্যপদ পাচ্ছে না ইউক্রেন। ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনের ঠিক একদিন আগে সেই ইঙ্গিতই দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আজ থেকে শুরু হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক জোট ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন।
ভিলনিয়াসের এ সম্মেলনে যোগ দিতে রোববার রাতেই ইউরোপের মাটিতে পা ফেলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রথমেই গেছেন লন্ডন।
লন্ডনে যাওয়ার আগেই সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হওয়ার জন্য প্রস্তুত।’ বাইডেনের এই মন্তব্যের পর ইউক্রেনের সদস্য হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিবিসি, সিএনএন।
বাইডেন আরও জানান, তিনি আশা করেন, ইউক্রেন যাতে ন্যাটোর সদস্য হতে পারে, এর জন্য ন্যাটোর নেতারা একটা যুক্তিসংগত পথ তৈরি করবেন। ন্যাটোর সদস্য হতে গেলে সবকটি শর্ত পূরণ করতে হবে ইউক্রেনকে। সম্পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বিষয় আছে। বাইডেন বলেছেন, ‘ইউক্রেনকে ন্যাটোর মধ্যে নিয়ে আসার অর্থ হলো, রাশিয়ার সঙ্গে সার্বিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া।’
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, ইউক্রেনের সদস্য হওয়ার জন্য আরও কিছুটা সময় লাগবে। ইউক্রেনকে আশ্বস্ত করে বাইডেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের সব ধরনের সাহায্য করে যাবে। ইসরাইলকে যেভাবে সাহায্য করা হয়, সেভাবেই ইউক্রেনকে সাহায্য করা হবে।’ পরদিন সোমবার লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের বাসভবন ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে তার সঙ্গে বৈঠকেও ইউক্রেন প্রসঙ্গ আলোচনা হয় দুই নেতার।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউরোপে ন্যাটোর অন্যতম নেতৃস্থানীয় দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক, প্রতিরক্ষা এবং কূটনৈতিক সহযোগীও এবং আমরা ইউক্রেনকে তাদের রণক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও শীর্ষস্থানীয় দেশ।’
এ সময় ব্রিটিশ-মার্কিন সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক পাথরের মতো সুদৃঢ়।’ আসন্ন ন্যাটো সম্মেলনের অন্যান্য ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেন। রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাক্ষাৎ করেন।
এদিকে এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘যদি আমরা ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো ছেড়ে দিয়ে যুদ্ধ শেষ করার কথা বলি, আমি মনে করি, হতে পারে এভাবে-বাইডেন পাঁচ মিনিটের মধ্যেও এটি শেষ করতে পারেন। তবে আমরা এতে একমত হব না।’ খবর বার্তা সংস্থা তাস’র।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতির’ বিষয়েও মন্তব্য করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন ইতোমধ্যেই সেই সুযোগ পেয়েছিলেন। জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানো একটি ভালো উদ্যোগ। তবে ইচ্ছাটি বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সময়ে ইতোমধ্যেই একবার এই ২৪ ঘণ্টা পেয়েছিলেন উল্লেখ করে ইউক্রেনীয় নেতা জোর দেন, পূর্ণমাত্রায় না হলেও আমরা তখন যুদ্ধে ছিলাম এবং আমি মনে করি, তার হাতে সেই সময়টি ছিল। তবে তার কাছে অবশ্যই অন্য কিছুর অগ্রাধিকার ছিল।’ ইউক্রেনে সহায়তা কমানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে কিছু ‘বিপজ্জনক সংকেত’ আসছে বলে উল্লেখ করেন জেলেনস্কি।
ওয়াগনার বসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পুতিন : প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ক্রেমলিনে ওয়াগনার প্রধানকে ডেকে পাঠান রুশ প্রেসিডেন্ট। ২৯ জুন তাদের মধ্যকার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে নিশ্চিত করেছেন ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ।
সম্প্রতি ফরাসি একটি গণমাধ্যমে এ নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এরপরই বিষয়টি সত্যি বলে নিশ্চিত করল ক্রেমলিন। রুশ গণমাধ্যম আরটি জানিয়েছে, ওয়াগনারের বিদ্রোহের মাত্র ৬ দিনের মাথায়ই পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন প্রিগোজিন। এ সময় তার সঙ্গে ওয়াগনারের ৩৫ কমান্ডার উপস্থিত ছিলেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তাদের সঙ্গে কথা বলেন পুতিন।
এ সময় ওয়াগনার প্রধান তার অনেক কাজের ব্যাখ্যা দিয়েছেন পুতিনের কাছে। পেসকভ বলেন, পুতিন ওয়াগনার কমান্ডারদের বক্তব্য শুনেছেন এবং তাদের কীভাবে আবারও ইউক্রেন যুদ্ধে মোতায়েন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।